জেলা প্রতিনিধি,লালমনিরহাট।।
উজানের ঢল আর ভারি বৃষ্টি পাতে তিস্তা ও ধরলা পানি বৃদ্ধি পেয়ে। তিস্তার পানি দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে নিম্নাঞ্চলে হুহু করে পানি প্রবেশ করছে। বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। দুশ্চিন্তায় আছেন নদী পারের মানুষ।
এ দিকে প্রবল পানির চাপে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেল ৩ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২দশমিক ৫৯ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা চর অঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। চরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকায় প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানিতে তলিয়ে গিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
দুপুর ১২টায় তা বিপৎসীমার ১৩ সেমি ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পরে বিকেল তিনটায় তা ১৭ সে.মি. ওপরে রেকর্ড করা হয়।
এর আগে সকাল ৬ টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর ফলে জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চলে ইতিমধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। চরাঞ্চলেও পানিতে ডুবেছে বাড়িঘর ও রাস্তা ঘাট।
তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধিতে জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী,দোয়ানী,ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিংঙ্গীমারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী,
কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা,কালমাটি,পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, বড়বাড়ি,রাজপুর,গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ ইতিমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে চলাচলের রাস্তা। এতে নদী পাড়ে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
বন্যার পানির ঘরবাড়িতে প্রবেশ করায় অনেকেই উচু স্থান ও বাধের রাস্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। চরগুলোতে নলকুপ, টয়লেটে পানি উঠায় বিশুদ্ধ পানি সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যায় পড়ছেন তারা।
হাতীবান্ধা উপজেলার গুড্ডি মারি ইউনিয়নের ছয়ানী গ্রামের আয়নাল হক বলেন, সকাল থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। আমরা অনেক কষ্টে চলাচল করছি। রাতে যদি পানি বাড়ে তাহলে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছি।
আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধন এলাকার
মহুবর রহমান বলেন, সকাল থেকেই পানি হাটু সমান । পানি বাড়ছে আর বাড়ছে। রাতে জানিনা কি হবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে অত্র ইউনিয়নের প্রায় দুই পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। নদী পাড়ের মানুষ গবাদি পশু হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে আছেন।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে ফলে আরও পানি বাড়বে।
লামনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ রাখছি। জেলায় দুর্যোগকালীন ৪৫০ মেট্টিক টন চাল ও সাত লাখ টাকা বরাদ্দ আছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং পিআইওর মাধ্যমে ১১০ মেট্টিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। আবারও তালিকা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে।